Monday, 4 November 2019

আজ ২১ জুলাই ২০১৬, চিড়িয়াখানার সামনে দিয়ে যাবার সময় বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল ট্যাক্সিখানা।পুলিস একদল মানুষকে লাইন করে চিড়িয়াখানায় ঢোকাচ্ছিল, আর একদল মানুষ অপেক্ষা করছিল রাস্তা টপকে ওপারে আসার। এই লাইনেই চোখে পড়ছিল ফ্লুরোসেন্ট গোলাপি চুড়িদার পরা বছর বারোর একটি প্রাণবন্ত, ফুটফুটে মেয়েকে। গায়ের রঙটা একটু বেশিই ঘন।তাতে গোলাপি চুমকি বসান চুড়িদারের মেয়েটি আলাদা করেই চোখে পড়ছিল। ওর পিঠে একঘর মাত্র বোতাম, তাও সেফটিনপিন দিয়ে আঁটা ।সস্তার চুড়িদারের ওড়নাখানা পর্যাপ্ত নয়, ঢলঢলে জামাখানা নিচের দিকে নেমে দ্যাখা যাচ্ছে বুকের অনেকখানি, বুক বলতে আছেই বা কি, ওই কখানা হাড় বইতো নয়, তবুও ও ওড়নাখানা টেনে নিচ্ছিল মাঝেমাঝেই,  জন্ম ইস্তক শিখেছেতো মেয়ে, ঢেকে রাখতে হয়।মেয়েটির হাতে জামার সঙ্গে মেলান বুড়ির চুল ( আদুরে বাচ্ছারা যাকে ক্যান্ডি বলে), পা দুখানা অত ভিড়ের মধ্যে দেখতে পাইনি, হয়তো 'তাঁর' মতই হাওয়াই পরা!ওর ঠোঁটে ছিল চকচকে লাল লিপস্টিক, আর দু চোখে ঘন কাজলের রেখা।সেই চোখ দিয়ে শুষে নিচ্ছিল চারপাশের কলকাতাকে, আহা ভাগ্যি এলি মেয়ে মিটিং করতে।মেয়েটির সঙ্গে ছিল তালঢ্যাঙা এক যুবক।কি যেন বুঝিয়ে চলেছে মেয়েটিকে। হয়ত বলছে আর একটু বাদেই তুই দেখতে পাবি বাঘের খাঁচা কিম্বা হায়নার গর্ত।আচম্বিতে সিগন্যাল খুলে যাওয়াতে ভিড়ের চাপ বাড়ছিল মেয়েটির লাইনখানায়, ঠিক তখনই পেছন থেকে দুটো কালো হাত ঢুকে গেলো মেয়েটির চুড়িদারের গলা দিয়ে। কাজল পরা। বিস্ময়ভরা ওর চোখদুটো কুঁচকে উঠছিল যন্ত্রণায়, আর সেই তালঢ্যাঙা গার্জেনটি পেছন ফিরে একটু হাসি দিলো মাত্র, মনে হল বলে উঠল দেখলি হায়নার গর্ত। আরো দেখাব চল।আমার ট্যাক্সিটা সিগন্যাল পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, অনুরোধ করলাম একটু দাঁড়ান ওদের আটকাই। ড্রাইভার বললেন এখন দাঁড়ালে কেস দেবে। জানেন না আজ ২১ জুলাই। মেয়েটি কি জানত আজ ২১ জুলাই! তাই কি ও বুক পেতে দিলো শহিদের মতো।
আর আমি শহিদ দিবসে ট্যাক্সি চড়ে বেড়ান বাঙালি, কলকাতা দেখে এসে ফেসবুকে লিখি What's in my mind...

No comments:

Post a Comment