Saturday, 9 November 2019

ঘরেলু

যাদবপুর এইট বি তে সেদিন দেখা হলো মেয়েটির সঙ্গে। নীলা কেমন আছো বলে নিজেই এগিয়ে এলো। আগে হলে চিনতে পারতাম না এখন ফেসবুকের দৌলতে প্রায়ই মেয়েটিকে দেখি। আমার সহপাঠী ছিল কিনা মনে নেই। এক বছর ওপর বা নিচেও পড়তে পারে। ওকে মনে আছে কারণ ওর প্রেমিক আর আমার একই বিভাগ ছিল। ছেলেটির কথা মনে পড়ায় বললাম অমুক কেমন আছে। মেয়েটি জবাব দেয় আমাদের যোগাযোগ নেই বহু বছর। অপ্রস্তুত হই। ও আমাকে নানা প্রশ্ন করছিল আমি পালটা কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে পড়ল মেয়েটি কবিতা লিখত। জানতে চাইলুম লেখালিখি করছ? মেয়েটি জবাবে বলে 'ধুস কবিতার পাঠক কই। লিখেটিখে খালি শান্তি নষ্ট।' আমি জানতে চাই 'শান্তি নষ্ট কেনো!' মেয়েটি বলে 'কজন প্রতিষ্ঠিত মেয়ে লেখক, শিল্পীর একটা করে বিয়ে দেখেছ?' আমার মুখের এক্সপ্রেশন কেমন ছিল কেজানে মেয়েটি তাড়াতাড়ি বলে ওঠে 'jokes apart, মজা করছিলাম, এই তুমি না আমার বরকে চেন।' নামটা শুনে বুঝলুম আমি কেনো অনেকেই চেনে। আমি কম বলছিলাম মেয়েটি ইউনিভার্সিটির দিকে দেখিয়ে নানা স্মৃতি রোমন্থন করছিল। আর আমি ওকে দেখছিলাম, সাদা হ্যান্ডলুমের শাড়ি, বোট নেক ব্লাউজ, রূপলি গয়না, নাকে সিলভার নোসপিন। আর বাঁ হাতে প্রকান্ড সোনা বাঁধানো পলার আংটি। মেয়েটি বলে 'তখন থেকে আমার আংটিটা দেখছ কেনো গো? আমি এসব মানি না। আমার মা মানে এসব, মাকে না করতে পারি না। কষ্ট পাবে। আসলে আমার বর খুব ভালো মানুষ। আমি না খোঁচালে কোনো রাগটাগ নেই। ওর কেবল একটাই অভিযোগ আমি একদম তোমাদের মত সংসারী নই। তাই এসব মা দেয়। যদি ঠিকঠাক হইএকটু,  ঘরেলু টাইপ'। আমি ওকে আশ্বস্ত করি 'আরে না আমি এসব দেখিনি।' আমার বাস এসে যাওয়ায় আমি ওকে বিদায় জানাই। বাসে উঠে  বাসের আয়নায় দেখি আমার পেছনে লাইন দিয়ে বসে আছে আমাদের মতো  সংসারী মেয়েরা। তাদের সকলের হাতে আংটি। এমনকি আমার অনামিকাও ফাঁকা নেই।

No comments:

Post a Comment