Thursday, 7 November 2019

আশায় আশায়

#আশায়_আশায়
নিজেকে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয় আমার। আফগানিস্তান থেকে আলমবাজার সর্বত্র নিজেকে দেখতে পাই ঘুমের মধ্যে। উপায় কী! পা চলে তো পকেট চলে না। পকেট আনা দু আনায় ভরে উঠলে শরীর চলে না অথবা সময় নেই বলে সময় বয়ে যায় বেশ খানিক। অগত্যা যাযাবরের জীবন কাটে এই ফেসবুকে, ইউটিউবে ইনস্টাগ্রামে অথবা গুগুলে।
এই সব সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ালে আপনি সমাজ, সংসার অন্তর সব দেখতে পাবেন। এখানে ঘুরে বেড়ালে বুঝবেন সাম্যের ধারণা কত ভুল অথবা বস্তাপচা। এখন তো হাতে হাতে মোবাইল আর মোবাইলে মোবাইলে ফেসবুক। সবাই ফেসবুকে আছি মানে বালিগঞ্জ আর বনগাঁর বন্ধুত্ব হবে ভাববেন না।  সোনারপুর হয়ত সাউথ সিটির ফ্রেন্ডলিস্টে থাকে কিন্তু তাদের মধ্যে বিস্তর তফাত। এখানে হিন্দু মুসলমান, বাম, বিজেপি, তৃণমূল, ছেলে,মেয়ে,হিজড়ে, কালো, ফর্সা, লম্বা, বেঁটে, শিক্ষিত, অশিক্ষিত,  এম.এ, বি.এ, ডাক্তার, এঞ্জিনিওর ব্রাহ্মণ, শূদ্র এমন হাজার হাজার ভাগ আছে।  ক্লাস ডিফেরেন্স অতি স্পষ্ট।  উদাহরণ স্বরূপ বলি খুব নাম করা এক মহিলা লেখককে দেখি রোজ ফেসবুকে লেখেন, গান গান, গাছ পালার ছবি দেন, রান্নার ছবি দেন, নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করেন। অসম্ভব সুন্দরী সেই লেখককে আমি রোজ দেখি। আর মনে মনে তাঁর মত বাঁচতে চাই। তা সেই লেখকের অগণিত ভক্ত, তারা তাঁর ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টেই আছেন। মহিলা আক্টিভ হলেই তারা মন্তব্যের ঝড় তোলেন। এতো যে সবাইকে উত্তর দিতে হলে তিনি পাগল হয়ে যাবেন। তাই মহিলা বেছে বেছে উত্তর দেন, লাইক দেন, লাভ দেন। কাদের বেছে নেন যাঁরা তাঁর ক্লাসের। একই রকম সোশ্যাল স্টেটাস। ধৈর্য অগাধ,  নাহলে দেড়শ মন্তব্যের ভিড়ে ক্রিম অফ সোসাইটি বাছা মুখের কথা নয়। আমার আগে ভারি রাগ হত। মনে হত বেশ তোমার সবাইকে উত্তর দেওয়ার দরকার নেই,  সব মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য হয়ও না, কিন্ত একটা চিহ্ন তো আঁকা যায়, কান্না,হাসি,ভালোবাসা, রাগ কতই তো চিহ্ন দেওয়া এখানে। তাই যদি না পারো কাউকে দিও না। আরে বাবা তোমার লেখক বন্ধুর অথবা বড়লোক সুগৃহিনীর রয়্যালটিতে কি জীবন চলবে, চলবে তো এদের জন্য। পরে মনে হয়েছে বেশ করে। অন্তত তাঁর অন্তরটি তো দ্যাখা যায়। মনে মনে ক্লাসলেস বলে গাল দিয়ে আয় গলা জড়াই বলে সোশ্যাল ওয়ার্ক করার চেয়ে এই ভালো।  যে জিনিস ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে তার জন্য কাঙালপনা বাড়ে তিনি জানেন।
এই যে সাজানো  ডিশ, সাজানো  ঘর, সাজানো আমি,  এইটেই কেবল সারসত্য হয়ে ধরা দিক মানুষের কাছে এই তো সকলের কাম্য। সেই তাসের ঘরের বউটিকে মনে পড়ে আজকাল খুব। ভেতরের ফোঁপরা জীবনটুকু আড়াল করার নামই সোশ্যালমিডিয়া। এই সব মিডিয়ামগুলো আসলে ফরাসি পারফিউমের গন্ধ। আপনার বাতকর্মের গন্ধটুকু আড়াল করার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিচ্ছু পাবেন না। 
আমি নিজেও তো নির্লোভ,  নির্মোহ নই। আমার মধ্যেও ছলনা, কপটতা  ভণ্ডামি ঈশ্বর ঠেসে ঠেসে দিয়েছেন। তবু ভাবি মুক্ত হব কোনও দিন সব কিছু থেকে।  তাই কদিন মনকে প্রবোধ দিচ্ছি পুকুরঘাট আসলে বৃহৎ সত্যের সন্ধান আর আমার নিজের দ্যাখাটাই সংকীর্ণ। আশা হারান পাপ এটুকুই একমাত্র সত্য, এই আশা নিয়ে আমি রোজ পুকুরপাড়ে এসে বসি আর আপনাদের ডাকাডাকি করি।

No comments:

Post a Comment