Thursday, 7 November 2019

চোখে আঙুল

#চোখে_আঙুল
আজকাল ফেসবুকে অনেকেই লেখেন। মন্দ কী? সকলকে তো প্রকাশক আর পত্রিকারা জায়গা দেন না। তাঁরা যদি লেখেন লিখুন না। যদি পড়বাব যোগ্য না মনে হয় পড়বেন না। কিন্তু এর কিছু একটা শক্তি তো আছে, যা আজ আর অস্বীকারের জায়গা নেই। তাই বহু বিখ্যাত লেখকও আজকাল নিয়ম করে  সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন। এটা জেনেই লেখেন এখানে একটা লেখার আয়ু মাত্র ঘন্টা কয়েক। তাঁদের হাজার হাজার লাইক পড়ে। শেয়ার হয়। ফলে আপনাকে তিনি বন্ধু তালিকায় না রাখলেও আপনি তাঁর লেখা পড়তে পান। আর সে লেখা মনে ধরলে বারবার পড়তে চাইলে, বইয়ের দোকানে গিয়ে খোঁজ করেন।  যাঁরা অখ্যাত তাঁরাও লেখেন। তার মধ্যে কোনও কোনও লেখা মনে ধরে যায়, অসাধারণ হয় ভাইরাল হয়, আবার হারিয়েও যায়। আবার কোনও কোনও লেখা ট্র‍্যাশ হয়, হাস্যকর হয়। আপনার আমার মনে হয় পাতে দেবার যোগ্য নয়। সে লেখাতেই আবার দ্যাখেন কেউ কেউ আহাঃ, উহু করছে। আপনার মন বলে ধুত্তেরি সাব স্টান্ডার্ড লোকজন সব। বেশ করেন ভাবেন। আপনার ভাববার অধিকার আছে। কাছের বন্ধুর সঙ্গে সে নিয়ে আলোচনার অধিকার আছে। কিন্তু প্রকাশ্যে তাঁকে ব্যাথা কেন দেন বলুন তো? তিনি তো আপনার দেওয়ালে গিয়ে লিখছেন না। তাঁর লেখা যদি সমাজ সংসারের অপকার না করে কী ক্ষতি হয় সে যদি বাজেই লেখে।  ফেসবুকের আজকাল একদল গুরু ঠাকুর হয়েছেন। কেবল শুধরে দেওয়ার খেলায় মেতেছেন,বানান, বাক্যের গঠন, কোথায় থামবেন, কোথায় চলবেন, কতটা কবিতা হলো, গল্পের দূর্বলতা কি, লেখার মান ইত্যাদি ইত্যাদি। কী হয় দিদিরা, দাদারা এতে? অন্যকে  কিস্যু হচ্ছে না বললে আপনি অনেক পারেন এইটে প্রমাণ করা যায়। আর কী হয় একটু বলবেন প্লিজ। শুধরে যদি দিতেই হয় তাঁর ইনবক্সে গিয়ে দিন। অথবা নিজের পেজে নিয়মিত একটা রিভিউ সেকশন রাখুন। ভালো সমালোচকের বড় অভাব। তর্ক করুন, ব্যঙ্গ করবেন না। 
আসলে মেয়েদের একটি ফেসবুক পেজ আছে পুকুরঘাট। তাতে একটি মেয়েকে আজ লিখতে বলায় সে বলল ’ওরে বাবা না নীলা দি আর লিখব না। আমি লিখলেই লোকে যে ভাবে  ভুল ধরে, বানান ভুল ধরে আমি আর লিখব না।’ বিশ্বাস করুন মেয়েটা বড় একা আর ।এই টুকুই তাঁর মুক্তির জায়গা ছিল। ও জানে ও কোনও দিনও ভার্জিনিয়া উলফ বা লীলা মজুমদার হবে না। তবুও ইন বক্সে কতদিন কবিতা পাঠিয়েছে, নানান লেখা পাঠিয়েছে আমায়। কখনও পড়েছি কখনও পড়াও হয়নি। যেদিন পড়েছি বলেছে জানো তো দিদি আমার অমুক ঘটনা থেকে লিখেছি। ওই টুকু কত মানুষের কেড়ে নিচ্ছেন এই হতাশ, চোখে আঙুল দাদা দিদিরা ভেবে দেখুন। 
পরিশেষে  খুব সংক্ষেপে একটা গল্প শোনাই। একজন একটা ছবি এঁকে তার বাড়ির বাইরে রেখে ছিলেন কেমন হয়েছে জানতে চেয়ে। তাতে সমালোচকরা নানা রকম ভুল ধরতে শুরু করলেন। লোকটি বলল আপনারা এক কাজ করুন কালো রঙ দিয়ে জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দিন। আমি পরদিন শুধরে নেব। দ্যাখা গেলো গোটা ছবি প্রায় কালো দাগে ভরে গেছে। পরদিন ছবি শুধরে আবার রাখল আবার ছবি কালো দাগে ভরে উঠল। ভদ্রলোক হতাশ হয়ে বন্ধুকে সে কথা বলাতে বন্ধু বলল এক কাজ কর আজ আর কালো কালি না রেখে  রঙ রেখে বল ছবি শুধরে না দিয়ে ছবি এঁকে দিতে। তাতে পরদিন থেকে দ্যাখা গেলো ক্যানভাস ফাঁকা পড়ে আছে। কেউ আঁচড়ও কাটেনি। কাজেই কাউকে ভয় না পেয়ে নিজেকে মেলে ধরুন।বিশ্বাস করুন যাঁরা প্রকাশ্যে ভুল ধরেন  তাঁরা আসলে আপনার ক্ষমতাকে ভয় পান। তবে যাঁরা পরম মমতায় আপনাকে একান্তে শুধরে দেন তাঁরা কিন্তু আপনার বন্ধু।

No comments:

Post a Comment