#খিস্তি_ও_রাজনীতি
এমন নয় যে খিস্তির উৎপত্তি অতি সম্প্রতি। কিন্তু খিস্তির রাজনৈতিক এবং সামাজিক অনুমোদন বা প্রকাশ্য উচ্চারণ বা লেখার অনুমোদন সম্প্রতিই বটে। আধুনিক, স্মার্ট আর্টের অনেকগুলি অনুষঙ্গের একটি হয়ে উঠছে খিস্তি। রাস্তা-ঘাটে, অফিসে, ইশকুলে, সিনেমায়, থিয়েটারে সর্বত্র লোকে অনায়াসে খিস্তি দিয়ে চলেছে। আমাদের কান ক্রমশ খিস্তিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এর কারণ নিশ্চয়ই পুঞ্জিভূত রাগ এবং সামাজিক অবদমন। যার মধ্যে যৌন অবদমনও আছে। কিন্তু খিস্তি বক্তার সমস্ত না পাওয়াকে অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে দেখলেও আমার মন এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা যে আমার সংস্কৃতিতে ক্রমশ খিস্তি বিস্তার করবে। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগে রাজনৈতিক উষ্মা প্রকাশের একটা বড় অস্ত্র হয়ে উঠছে খিস্তি। অনায়াসে এক পার্টি অপর পার্টিকে খিস্তি করে চলেছে। এ ব্যাপারে কোনও রাজনৈতিক দল এতটকু কম যায় না। কেউ তিয়াত্তর বছরের মহিলা শিল্পীকে যৌনদাসী বলে বাজারে মিম ছাড়ছে, তাদের সমর্থকরা বিরোধীতা দেখলেই নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রকাশ্যে সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলিতে খিস্তি লিখছে। আবার কেউ সেই মিম ছাড়া রাজনৈতিক দলকে অসভ্যতার জবাব দিতে গিয়ে দিতে গাঁ... মারব, চো...না, চু...য়া, ক্যা...বো ইত্যাদি অনায়াসে বলছেন এ ব্যাপারে বাম, বিজেপি,তৃণমূল, কংগ্রেস কেউ পিছিয়ে নেই। কিন্তু স্বপনেও ভাবা যায় না জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রণব মুখার্জি , অটল বিহারী বাজপাই ইত্যাদি নেতারা প্রকাশ্যে কাউকে খিস্তি দিচ্ছেন। অথচ তাঁদের পার্টির অনুগামীদের ইদানিং এটাই প্রতিবাদের ধরন হয়ে উঠছে। যে যত বেশি অশ্লীল শব্দে প্রতিবাদ করছে যেন সে ততবেশি পার্টির অনুগত। রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে যে অবগত নয় এমনটা তো নয়। কিন্তু দলগুলো এটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, বাড়তে দিচ্ছে এই সংস্কৃতি, ইচ্ছে করলেই তারা এগুলো আটকাতে পারে, কিন্তু করছে না। কেন? যত তুমি উত্তেজিত থাকবে তত তোমার সত্য দেখার ক্ষমতা কমবে। আর যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ শব্দে উত্তেজনা আরও বেশি। তাই এককালে যা পার্টি গুন্ডা পার্টি মস্তানরা উচ্চারণ করত আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় পার্টি সমর্থকরা অনায়াসে বলছে সেসব শব্দ। মনে রাখবেন আমার আপনার সন্তানের মধ্যেও প্রোথিত হচ্ছে এই সংস্কৃতি। কাজেই সচেতন না হলে আপনিও রেহাই পাবেন না খিস্তি খাওয়া থেকে। তাতে যদি আপনার কিছু এসে যায় না তবে খিস্তি প্রাক্টিস করুন প্রাণ ভরে। নয়ত সন্তানকে আটকান।
No comments:
Post a Comment