Monday, 11 November 2019

উৎসব প্রিয় বাঙালির পুজো ও প্রস্তুতি


--------------------------
 উৎসব প্রিয় বাঙালিরা দুর্গা পুজোর কেনাকাটা শুরু করেন চৈত্র সেল থেকে।  অপছন্দের আত্মীয়দের এবং হঠাৎ আসা পূজা গিফটের, রিটার্ন গিফট হিসেবে যা দেওয়া হবে তা এই সময় কিনে ফেলা হয়। এ ছাড়া পুজোয় ঘরে পাতার বিছানার চাদর, ঠাকুরের শাড়ি এবং পুরুতের গামছা ও নিজের  দুর্গা পুজোয় হতে পারে শাড়ির কথা ভেবে চার জোড়া সায়া উৎসব প্রিয় বাঙালি চৈত্র সেলেই কেনেন 🛍। 
আসল কেনা আরম্ভ হয় পুজোর দেড় মাস আগে থেকে শুরু করে পঞ্চমীর দিন পর্যন্ত। এসময় দোকানে গেলে হামেসাই শুনবেন  'না অত ভালো দিতে হবে না । এটা নিজের জন্য নয়, লোককে দেবো’🙄। 
এবার নিজেরটা পছন্দের পালা, এই কাজে সাত দিন থেকে সতেরো দিন লাগতে পারে। বাজেট নিজের চার থাকলে অন্যদের থেকে পাঁচশো করে কমিয়ে সাত থেকে দশে চলে যায়। আদর্শ পুরুষরা কিন্তু এসব বুঝেও না বোঝার ভান করেন🙄🙄। নচেৎ পঞ্চান্নতেও প্যান্ডেলে বসে বাইশের মেয়েকে বৌমা না ডেকে 'বৌদি ভালো তো' বলা, 'কত্তার আজও অফিস' বলে খুঁচিয়ে ঘা করে হোয়া নম্বর নেওয়া অসম্ভভ। বন্ধুদের সঙ্গে অষ্টমীর বিয়ার পার্টিও অসম্ভব🍷🍾। পারমিশনই পাবেন না। 
 জামা কাপড়ের বাজারে গেলে আপনি কিন্তু রকম ফের পুরুষ পাবেন উৎসব উপলক্ষে।  বাজার লাভার পুরুষ এবং বাজার হেটার পুরুষ। দুদলই যদি বিবাহিত হন গিন্নির সঙ্গ দান করেন, ভালোবেসে ও না বেসে। অনেক বিবাহিত পুরুষ আবার মাখো মাখো সম্পর্কের মহিলা কলিগের বা বান্ধবীর  সঙ্গ দান করতেও জামা কাপড়ের দোকানে ঘোরেন।  সাম্প্রতিক অতীততে সবাই দেখেছি তাই উদাহরণ আর দিলুম না 🤫। এক দল পুরুষ অবিশ্যি নিজের উৎসবের পরিধান নিজে কেনেন। তারা হয় অবিবাহিত নয় বিবাহ বিচ্ছিন্ন, নয় বৌ তাদের নারীবাদি বা কমুনিস্ট অথবা বিয়ের পর বউয়ের সঙ্গে কেমিস্ট্রি জমে ওঠেনি, একেবারেই বউয়ের  রুচি, বুদ্ধির ওপর আস্থা নেই। ❌
 আর এক দলের কেনাকাটা বান্ধবী বা বৌরাই করেন। এরা বেশি বুদ্ধিমান। বাজার প্রিয় রমনীরা রুমাল, জাঙ্গিয়াও একটা লাগলে দুটো কেনেন। কুর্তা আর টি শার্ট আর নাই বা বললুম। এদের কেউ জিজ্ঞেস করল ধরুন 'স্যান্যাল দা কোথা থেকে নিলেন জামাটা? এই সব পুরুষদের উত্তর হয় ’এটা? কে জানেরে তোর বৌদি কোথা থেকে কিনেছে’ যাচ্চলে কিনে যখন এলেন বৌদি, বিলটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভুলে গেলেন 🤔!
আবার কোনও কোনও বাজার প্রিয় পুরুষ বৌকে নিজে পছন্দ করে কাপড়, সায়া, ব্লাউজ এনে দেয়। সেই সব বৌরা বলেন ’আমি বাবা কিনতে কাটতে পারিনা তোমার দাদা এসব ব্যাপারে খুব এক্সপার্ট’, 👰। 
এই সব মেয়েদের ভাববেন না নিপীড়িত।  এদের ক্ষেত্রে দাদারা আপিস গেলে বাড়িতে বেচতে আসা শাড়িওলার কাছে মাসে মাসে খাতা চলে।
 উৎসব প্রিয় মেয়েরা যখন পার্লারে যায় ফর দুর্গা পুজো অনলি, তখন অবিশ্যি  মহালয়ার হয়ে যায়, চলে পঞ্চমী অব্দি। চুল অবিশ্যি  একটু আগে কাটে💇।  এ সময় ভুরু ছাঁটে আর মুখ পালিশ করে। ওখানেও টিকিট হাতে ডাকের অপেক্ষা করতে হয়, এবং এ সময় ছেঁটে ডান ভুরুর সঙ্গে বাঁ ভুরু ম্যাচ করে না। গড়িয়া হাট থেকে জাঙ্ক জুয়েলারিও এসময়ই আসে। এবং এই সব মহিলারা জুতো কেনার জন্য ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন যতদিনে না খাদিম বা শ্রী লেদার্সে ঢুকে ভিড়ের চাপে দম বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে অনলাইনে জুতো কেনা হয়ে যায়, এবং মাপে ফিট হয় না,এই নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের লেডিস গ্রুপে কান্নার ইমোজি সহ খবর পৌঁছে দেন তাঁরা 😭এবং জুতোর দাম মিনিমাম তিনশো টাকা বাড়িয়ে বলেন।এ ক্ষেত্রে কেসটা বয়েসের উলটো।👠👡  জুতোর  ব্যাপারে পুরুষরা বেশ সৌখিন। মহিলাদের চেয়ে দামী জুতো পরা তাদের জন্মগত অধিকার। জুতো কোম্পানিরাও এ ব্যাপারে চরম patriarchy তে ভোগেন। জুতোর দামও রাখেন সেই হিসেবে 👢।
এরপর পুজোর দিনগুলোতে সেই জুতো পরে শালী সহযোগে কেউ কেউ ঠাকুর দ্যাখেন। গিন্নিরা অবশ্য দেওর, ননদের নিতে পছন্দ করেন না। হামলে রোল খান কত্তা গিন্নি বা প্রেমিক প্রেমিকা দুজনেই। (তার আগের দুমাস প্রবল ডেয়েটিং সেদিন ভঙ্গ হয়) মেয়েরা কেবল কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল হাতে নেন। বাচ্ছা থেকে গিন্নির হিল ভাঙা জুতো বাকি সব দ্বায়িত্বই পুরুষের এই ঠাকুর দ্যাখার দিনগুলিতে। গিন্নিরা লাইনে খুব এক রোখা, কাউকে এক চুল জায়গা ছাড়েন না। কত্তারা কিঞ্চিৎ দয়ালু, ডিপ কাট ব্লাউজের বৌদিকে আগে ছেড়ে দেন। আবার যদি সে বৌদি ইংরেজিতে সাহায্য চান তো কথাই নেই। 
এরপর আছে রেস্তোরায় লাইন দেওয়া। কাঙালি  ভোজন এবং বস্ত্রদানের লাইন এর চেয়ে ডিসিপ্লিনড হয়। খাবারের দোকানের চেহারা নাই বা বললুম। 
জেনারেশন নেক্সটের আরেক সঙ্কট👧👦, বিশেষত ষোল থেকে সাড়ে সাতাশ।  তারা অন লাইনে জামা কেনে, অধিকাংশই ফিট করে না, তাও পরে। তারা ভুলে যায় দুর্গা পুজো ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পনশর করে না। কাজেই মার্কিনি হাফ প্যাণ্ট, গোড়ালি অব্দি মোজা আর নর্থ স্টার পরে ঠাকুরের লাইনে দাঁড়ালেও মশারাও পিছু ছাড়ে না, আর ভাদ্দরের গরমও কমে না। এদের উন্মুক্ত পদযুগলে থাবড়ে থাবড়ে মশা মারতে হয়, এবং ফাস্ট ফুডের মোটা শরীরে টাইট সিন্থেটিক টি শার্টে গ্যাল গ্যাল করে ঘাম হয়। ব্যাপারটা দৃশ্যগত ভাবে ভালো না। বিশ্বাস করুন পোশাক হিসেবে আমার বিকিনিতে বা ছেলেদের উন্মুক্ত বক্ষেও আপত্তি নেই। কিন্তু ওডোমশ মেখে পোশাক পরা যায় না। 
যাই হোক জেনারেশন নেক্সটকে তার ওপর বাপ, মা বাংলা কালচার থেকে দূরে রাখবেন বলে  বলে অসুর আর গণেশের তফাৎও শেখাননি, কাজেই বেচারারা এতো লাইন দিয়ে কি যে দ্যাখে কে জানে। অনেক সময় কিছু না বুঝে দুগগা ফ্যামিলিকে ক্রিস্টোফার নোলানের সিনেমার ক্যারেক্টর হিসেবে ভেবে নেয়।  দাদা, বৌদি, মাসিমা, মেসোমশাই এসব করে সপ্তমীর সকালে তারকেশ্বরের জল যাত্রীর মতো পা ফুলিয়ে বাড়ি ফেরেন। কাল নর্থ কভার করবেন অথবা স্রেফ প্যান্ডেলে থাকবেন এই প্লানিং নিয়ে। আজ এই অব্দি। শুভ সপ্তমী। 
ডিসক্লেমার ১- কাল লিখে নিমকি চেয়েছিলুম আজ নারকেল নাড়ু চাইলুম। চিনির নাড়ু অবশ্যই, এট্টু কপ্পুর দেবেন। বিজয়ার দিন আমাকে কৌট করে দিয়েও দিতে পারেন। অধমের পিতৃদত্ত নাম নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাগ করে আমার নাম মুছে দেবেন না।🙏
ডিসক্লেমার ২- কাউকে আঘাত দিলে ক্ষমা করবেন। এসব পুজোর রসিকতা। আদপে আমি সিরিয়াস মানুষ প্রোফাইল ঘাঁটলেই বুঝবেন। সত্যি বলছি বাঙালির উৎসব বেঁচে থাক। কেবলই তো না পাওয়া। এইটুকু না থাকলে কি নিয়ে থাকে বলুন তো বাঙালি। আমার মত সিনিক বাঙালিকে পাত্তা দেবেন না।  আমরা ঘাটেও নহি পাড়েও নহি। ষোল আনা ফুর্তির ইচ্ছে, অথচ ইন্টেলেকচুয়াল জোনে নাম লেখাবার প্রবল প্রচেষ্টায়, পেটে ক্ষিদে মুখে লাজ। বেঁচে থাকুক দুগগা পুজো।❤❤ বেঁচে থাক বাঙালির উৎসব প্রিয়তা।

No comments:

Post a Comment