Saturday, 9 November 2019

আদিখ্যেতা বন্ধ হোক

#আদিখ্যেতা_বন্ধ_হোক 
আমি ইংরেজি বুঝিনা অথবা জানি না একথা সোচ্চারে বলা আর উলঙ্গ হয়ে সর্বসমক্ষে ঘুরে বেড়ানো  ভারতবাসীর কাছে একই রকম লজ্জার। তেমনি আমি ক্রিকেট,  ফুটবল আর লন টেনিস বুঝিনা বলা আমাদের কাছে সেই একই রকম লজ্জার। কিন্তু কেন! ইংরিজি যেমন আমার ভাষা নয় তেমনই ক্রিকেট,  ফুটবল, টেনিস আমার খেলা নয়। কিছু  বানিয়া এসে তাদের পছন্দ,  তাদের ভালোলাগা, তাদের রুচি আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে আর সেটাকেই সযত্নে  আমরা লালন করে চলেছি। যে সমস্ত খেলা আমাদের রক্তের মধ্যে নেই, জিনে নেই তাকে জোর করে অভ্যেস দিয়ে রপ্ত করলে কতখানি হওয়া সম্ভব! যদি বলেন ক্রিকেটের কথা, দুশো বছরের গোলামীর অভ্যেস আর ইংরেজদের কাছে নিজেদের আনুগত্য প্রদর্শনের প্রবল প্রচেষ্টা থেকে আমরা নিরন্তর অভ্যেস করে ক্রিকেট রপ্ত করেছি বটে, কিন্তু আমি হলপ করে বলতে পারি ভারতীয় ক্রিকেটকে যদি ফুটবলের মতো বহুদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়তে হত তবে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে  ভারতীয় ক্রিকেট টিমের অবস্থাও ভারতীয় ফুটবল টিমের মতই হতো। আমাদের শারীরিক গঠন, আমাদের ইনস্টিংট ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিসের জন্য তৈরিই হয়নি। যেটুকু আমরা করি পুরোটাই অভ্যেস থেকে। 
প্রায় একশ চৌত্রিশ কোটির দেশে স্বাধীনতার পর থেকে উনিশটি অলিম্পিক খেলে ভারতের সোনা প্রাপ্তির সংখ্যা মাত্র নয়টি। এরচেয়ে লজ্জার আর পৃথিবীর দ্বীতিয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশে আর কী হতে পারে। অথচ চীনের কথাই ধরুন গত পাঁচটি অলিম্পিকে তারা কত দ্রুত উঠে আসছে। তা কি কেবল তাদের রেসিডেন্সিয়াল আকাদেমি গুলোতে ছোট থেকে প্রাক্টিসের জন্যই সম্ভব হচ্ছে! সেটা একটা বড় কারণ তো বটেই। তার চেয়েও বড় কথা ওদের সকারের স্বাস্থ্য এবং খেলাধুলো চর্চায় প্রচন্ড গুরুত্ব দেওয়া এবং তার সঙ্গে সেই সমস্ত খেলাগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া যা তাদের ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার, ইন্সটিংট, এবং জিন পারমিট করে। সে জন্য সমস্ত খেলায় সাফল্যের সঙ্গে টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, মার্শাল আর্ট, ফেন্সিং ইত্যাদিতে চিনের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। এই খেলাগুলিতে ক্রমাগত সাফল্য তাদের অন্য খেলাগুলিতেও উৎসাহী করে তুলছে এবং এরা প্রচন্ড ডিসিপ্লিন আর চর্চার মধ্যে দিয়ে  সফলও হয়ে উঠছে। সোভিয়েট ইওউনিয়ান থাকা কালীন USSR এর প্রচন্ড সাফল্যের পেছনে কিন্তু ছিল মূলত আক্রোব্যাট,  ওরিয়েন্টেড খেলা গুলি।  জিমন্যাস্টিকস, পোলভোল্ট ইত্যাদির কথা বলা যায়। রাশিয়ার পাশপাশি দেশ রুমানিয়াও তাই ছিল। সের্গেই বুবকা, নাদিয়া কোমনিচি তো তার উজ্বল উদাহরণ। অথবা USA যে এতো সফল  তা কিন্তু ওদের খেলার ধরন অনুসারে খেলোয়ার নির্বাচন দেখলে বোঝা যায়। ট্রাক আন্ড ফিল্ড আথেলেটিক  কেন্দ্রিক খেলাগুলিতে  কিন্তু ওরা বেছে নিচ্ছে ব্ল্যাকদের কারণ ওদের ক্ষিপ্রতা অনেক বেশি, ওদের জিন তেমনি চালনা করে। কার্ল লুইস, জ্যাকি জয়নার কার্সি, ফ্লোরেন্স গ্রিথিফ এঁরা,সকলেই কালো মানুষ। আবার সাঁতারে  সাফল্য পাচ্ছে মাইকেল ফিলিপের মতো  সাদা চামড়ার মানুষ। অস্ট্রেলিয়া,  ব্রিটেন সব জায়গাতেই সাঁতারে সাফল্য পান সাদা মানুষরা। ব্যতিক্রম অবিশ্যই আছে কিন্তু তা ব্যাতিক্রমই।  আমেরিকা যেহেতু বহু জাতির দেশ তাই বিভিন্ন খেলায় বিভিন্ন জিনগত বৈশিষ্ট্যের মানুষ পাওয়া,সহজ।
কিন্তু সে বৈশিষ্ট নিয়ে তো আমাদের দেশও রয়েছে। এখানে মঙ্গল, আর্য, অনার্য এমনকি ব্ল্যাকদের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষও র‍য়েছেন। তবে খেলায় এমন ধারাবাহিক অসাফল্য  কেন আমাদের। তার কারণ সরকারের চরম উদাসীনতা।  খেলার খাতে সরকার যে টাকা বরাদ্দ করেন তার চেয়ে বেশি আমাদের একেকজন মন্ত্রীর বাৎসরিক চুরির পরিমাণ।  আছে খেলার জগতের নিজস্ব পলিটিস্ক। নিজের লোকেদের মুখ দেখে চান্স পাইয়ে দেবার প্রবণতা। এছাড়া যে খেলার প্রশিক্ষণে যত বেশি খরচ  মিডিয়াগুলোর সেই খেলা নিয়ে  তত বেশি নাচানাচি। যে কারণে হিমা দাসের থেকে সানিয়া মির্জার পেছনে নিউজ প্রিন্ট অনেক বেশি খরচ হয়। ভারতের মত বিরাট বাজার ধরার জন্য হাঁ করে বসে আছে বহুজাতিক সংস্থাগুলি। কাজেই যাকে বাজার খাবে তাকে ক্যাটার করো। বাকিদের পক্ষে দেশে মেডেল আনার সম্ভবনা থাকলেও তারা চুলোয় যাক। 

আপনারা দয়া করে ক্রিকেট,  টেনিস নিয়ে নিরন্তর আদিখ্যেতা বন্ধ করে কুস্তি, তীর ধনুক, কাবাডি ইত্যাদি সমস্ত খেলায় নিজেদের ছড়িয়ে দিন। এসব খেলা আমাদের রক্তে, আমাদের পরম্পরা। আমরা মনোযোগী হলে আম্বানী বিড়লারাও মনোযোগী হবেন। আমরা তাদের বাজার যে। আর আম্বানী, আদানিরা এ সমস্ত খেলায় লগ্নি করলে মোদি, মোনমোহনরা কিছু ভাবতেও পারেন।
#নীলা_বন্দ্যোপাধ্যায়

No comments:

Post a Comment