Monday, 11 November 2019

প্রাতরাশ

#জলখাবার
একমাত্র ধীর স্বভাব আর চেহারার গড়ণ ব্যাতিরেকে মেয়ে মানুষের সমস্ত গুণ বর্জন করিয়া জন্মাইয়াছিলাম আমি। জন্ম ইস্তক  এই সমস্ত শুনিয়া আমিও তাহা বিশ্বাস করি মনেপ্রাণে। ঘর গুছাইয়া রাখা, সূচীকর্ম, রন্ধন কিছুতেই আমার দক্ষতা নাই। এ জন্য অবিশ্যি কখনও আমাকে গঞ্জনা শুনিতে হয় নাই বরং সকলে বলিয়াছে আহা ও পারিবেনা আমি করিয়া দিতেছি। দিদি, মা, জেঠি, সশ্রুমাতা, বন্ধু, বোন সহায়িকা, এমনকি স্বামীও আমার মধ্য বয়সেও আমাকে এসব ক্ষেত্রে শিশুর মত প্রশ্রয় দিইয়া থাকে। বাটিতে বাটিতে, মুখে মুখে জোগান দিয়া। আমি বস্ত্রের স্তুপ, বর্তনের স্তুপ, বইয়ের স্তুপ, ধূলার স্তুপ দেখিলে আকূল পাথারে পড়ি। পেটিকায় সমস্ত কিছু কলসের মত গুঁজিয়া রাখিয়া আমার গৃহী না হইবার সুনাম বর্ধন করি। তার উপর সন্তানাদি নাই। প্রতিবেশী থেকে আত্মীয় সকলে বলিয়াই দেয় 'তোর আর কি অসুবিধে 'ট্যাঁ ফ্যাঁ তো নেই, কোনও কাজ নেই' সত্যই আমার অসুবিধা নাই। কিন্তু উহাদের কে যে এতো অসুবিধা করিয়া ট্যাঁ ফ্যাঁ আমদানি করিতে বলিয়াছে জানা নাই। যাই হোক শিবের ভজন করিয়া লাভ নাই। যে প্রসঙ্গে এই ভূমিকা, সংসারে আমার ইদানিং একটি মাত্র দ্বায়িত্ব অর্পিত হইয়াছে প্রাতরাশ প্রস্তুত। সেই কাজ করিতে রন্ধনশালায় ঢুকিয়া এতো কেশ কর্ষণ করিয়া থাকি মস্তকে কেশাভাব  দেখিলেই বুঝিতে পারিবেন । আমার সশ্রুমাতা আমার অবস্থা অনুধাবন করিয়া বলেন 'ছাড়তো ছেলেদের খালি নোলা আমায় ওটস দিয়ে ওদের পাঁউরুটি দিয়ে দাও’ শ্বশুরমহাশয় কিছুই বলেন না, আর উহাদের পুত্র বলেন 'আমি কী কখনও কিছু ডিমান্ড করেছি, যা হোক দিলেই হবে' সত্য এদের চাহিদা নাই কোনও অভিযোগও নাই। কিন্তু উহাদের মুখ দেখিয়া বুঝি ভিতরের যন্ত্রনা। তাই আমি মধ্যে মধ্যে উপমা, ডালিয়ার খিচুড়ি,  সান্ডউইচ, পরোটা সাদা আলুর তরকারি, ফ্রেঞ্চফ্রাই, দু একবার লুচি, স্ক্রাম্বেল্ড এগ, চিঁড়ের পোলাউ,এক দু বার রুটি সাধ্য মতো বানাইতে চেষ্টা করি। কি যে হইয়া উঠিল বুঝিতে পারিনা। জিজ্ঞাসা করি কেমন বানাইলাম উহারা সকলেই কহেন খুব ভালো। কিন্তু মনে মনে অবাক হন এই নিত্য কর্মে আবার এতো জানিবার কি আছে। কিন্তু গোপনে বলি যখন কোনও অনিত্য অতিথি আসিয়া বলে আপনার রন্ধন অপূর্ব, চোখ থেকে মুক্তা গড়াইয়া পড়ে অলক্ষ্যে । লোকে যতই ভাবুক আমি এই আগোছালো থাকা আর সাংসারিক অপটুত্বকে উপভোগ করি আমার মন জানে ইহা সর্বৈব মিথ্যা। কিন্তু খঞ্জের কী আর এভারেস্ট বিজয় হয়?

No comments:

Post a Comment