অমিত শাহ হঠাৎ করে কেমন বঙ্গ জাগরণ ঘটিয়েছেন সেই নিয়ে হাসাহাসি করতে-করতে
আজ আমি, আমার এক বোন সমা বান্ধবী আর তার সাড়ে তিন বছরের কন্যা পুপে একটি দোকানে পুজোর জামা কিনতে ঢুকেছিলুম। হিন্দুস্থান পার্কের ওই দোকানটির খদ্দেররা সাধারণত বাঙালি কিন্তু আমি ছাড়া কেউই তারকেশ্বর লোকাল অথবা বনগাঁ লোকালে চড়া মার্কা বাঙালি নন। যাঁরা শান্তিনিকতনে সখে বাড়ি করে রাখেন তেমন বাঙালি। অথবা যাঁদের বাড়িতে তিনসেট রবীন্দ্ররচনাবলী, বিভূতি, তারাশঙ্কর থাকে কিন্তু কখনও তা নিয়ে কথা বলেন না বরং কথা বলতে পছন্দ করেন কামু, কাফকা অথবা সিমোন দে বেভেয়র নিয়ে চোস্ত ইংরিজিতে এবং যারা নিচু তলার কর্মচারীদের সঙ্গে হিন্দি বলতে অভ্যস্ত তারাই মূলত কেনেন সে দোকান থেকে। আমার চেহারার একটা সুবিধে আছে বালিগঞ্জ থেকে বৈঁচিগ্রাম সর্বত্রই মনে হয় এ আমাদের লোক হতে হতেও হলো না। বা প্রায় আমাদেরই লোক। এই দোকানিও আমাকে প্রায় তাঁদেরই লোক ধরে নিয়ে গড়্গড় করে ইংরিজিতে কথা বলছিলেন আর কখনও হিন্দিতে। আমি যত বাংলায় জিজ্ঞেস করি উনি উত্তর দেন ইংরিজিতে। অথচ প্রতিটি জামা কাপড় আমাকে প্রচন্ড যত্ন করে দেখাচ্ছিলেন। আমার ভদ্রলোকের যত্নটুকু বেশ লাগছিল। আর মজা লাগছিল এই দেখে যে আমার সেই বান্ধবীর ন্যাশানল হাই-এ পড়া সাড়ে তিন বছরের কন্যা ভদ্রলোকের প্রতিটি কথায় দিব্য সাড়া দিচ্ছিলো। আমার হঠাৎ মনে হলো ওই সাড়ে তিন বছরের বাচ্ছার ভাবমূর্তি খারাপ করছি না তো আমি! ওকে বোধহয় দোকানি প্রথম প্রজন্মের ইংরিজি ইশকুলে পড়া বলে চিহ্ণিত করেছেন ও আমাকে মুর্খ ভেবে কিছুতেই আর ভালো জামা দ্যাখাবেন না। কিঞ্চিৎ আমিও জানি প্রমাণ করার লোভে সবে ইংরিজিতে উত্তর দিতে যাবো মনে পড়ল আমি সদ্য 'বঙ্গপ্রেমিক'-এর সদস্য হয়েছি। আমার বাবা আজন্ম বাংলার অধ্যাপনা করে আমাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করেছেন। মনে পড়ল আমি বাঙালি এতে আমার গর্বিত হওয়া উচিৎ। ইংরিজির বদলে মুখ থেকে বেরোলো 'পুপে তুমি ভালো করে বাংলা শিখছ তো?' দোকানির মহিলা সঙ্গীটি বুদ্ধিমতী। তাঁর মতো করে বাংলায় বললেন 'দিদি আপনার বিল হয়ে গেছে। কোনও অসুবিধে হলে আসবেন। আমরা আপনাদের জন্য আছি' উচ্চারণ শুনে মনে হল অবাঙালিই হবেন। আমি মনে মনে ভাবলুম তাইতো হওয়া উচিৎ আপনারা আমাদের জন্য থাকলে আমরাও আপনাদের জন্য থাকব। কিন্তু আপনাকে আমাকে দুজনকেই থাকতে হবে যে।
No comments:
Post a Comment