Monday, 11 November 2019

খরচের খাতায়

#খরচের_খাতায়
জমার উল্টোটা যদি খরচ হয় তবে আমি খরচে। এ আমার জিনগত বৈশিষ্ট্য। 
আমার বাবা-মার ধাতে সেভিংস ব্যাপারটা কোনও কালে নেই।  দু জনেই প্রচন্ড খরচে। এ আমাদের আত্মীয় স্বজন সকলে জানেন। এবং এ জন্য সারা জীবন আমাদের যৌথ পরিবারে বিস্তর জ্ঞান শুনেছেন ওঁরা। বাবা ছিলেন চরম আত্মভোলা, লেখাপড়ায় ডুবে থাকা মানুষ। আর মা প্রায় সংসারী। কিন্তু দুজনেরই কমন ইন্টেরেস্ট ওই খরচে। যেহেতু দুজনেই রোজগেরে ছিলেন তাই কেউ কারও খরচে মাথা ঘামাতেন না এই যা রক্ষে।  আমি কিন্তু সে জন্য আজীবন ভেবেছি আমি প্রচুর জমাব। এবং আমার জীবনে এমন একজন ত্রাতা আসবেন যিনি আমায় জমানোর ব্যাপারে সম্যক পরামর্শ প্রদান করিবেন। পরামর্শদাতা প্রয়োজন কারণ   আমি নিজেও  ছেলেবেলা থেকে সমস্ত ব্যাপারে একটু আলুথালু। যারা আমায় চেনেন তারা জানেন নিত্য জিনিস হারানো আমার রুটিনের মধ্যে। টাকাও আমার মাঝে মধ্যেই হারায়, চুরিও যায়। এ জন্য আমি আমার চেয়েও বেশি আলুথালু আমার মায়ের থেকে প্রচন্ড বকাও খেয়েছি। আমি,আমার বাবা, মা এবং কিছুটা হলেও দিদির ভুলের গল্প নিয়ে আস্ত উপন্যাস হয়ে যেতে পারে। তাই বলছি টাকা হারানো  যদি খরচের মধ্যে পড়ে তবে আমি বেজায় খরচে। আমার বাকি খরচের কথা আমি জানি না। আমার দিদি আমাদের তুলনায় কিঞ্চিৎ গোছানো।  কিন্তু খরচের ব্যাপারে সেও সিদ্ধ হস্ত। এ পর্যন্ত জীবনের  সমস্ত দামী ইচ্ছেগুলো ওই পূরণ করেছে। দিদির ছেলেমানুষ  বয়েসে বিয়ে হবার পর আমার ২৬ বছরের জামাইবাবুকে দেখে আশা জেগেছিল এবার একজন জমানোর লোক এল।ব্যক্তিগত স্তরে জানি না তাঁর জমানোর কথা। কিন্তু কোনও কিছু পাঁচশো লাগলে উনি নিয়ে আসেন পাঁচ কেজি।  কে জানে ভদ্রলোক খরচে কিনা। আর একজন আমার মেসোমশাই, সরকারী চাকুরে আমার মেসো বাজারে গেলে বাজারওলাদের তিনদিনের সংসার খরচ নিয়ে আর চিন্তা থাকে না। সে জন্য উনি বাজারে হেব্বি পপুলার।
কাজেই  বোঝাই যাচ্ছে ছাত্র জীবনে আমি এমন একটা খরুচে আবহাওয়ায় বড় হয়ে উঠেছি। ছেলেবেলায় জমানো বলতে মাসিপিসিদের থেকে পাওয়া দশ বিশ টাকা দিদুর হাতে দিয়ে রাখতাম। ওইটেই আমার জীবনের একমাত্র শক্ত পোক্ত সেভিংস একাউন্ট।
ভেবেছিলাম চাকরি যদি করি তাহলে অতি অবশ্য টাকা জমাব। তা আমি আমার ব্যাচেলার চাকরি  জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছি একটা ভাড়া করা ফ্লাটে আমি আর আমার বোন সমা বান্ধবী সন্টুর (নবনীতা)সঙ্গে।সেখানে বেচারার কাজই ছিল আমার জিনিস গোছান। আমায় বেশ বকাবকিও করত অগোছালো স্বভাবের জন্য। আবার বকাবকি করে গুছিয়ে রেখেও দিত সব।  প্রথম প্রথম এক সঙ্গে থাকতে শুরু করে আশায় ছিলুম এমন গোছানো গাছান মেয়ে ও নিশ্চয়ই আমাকে শেখাবে কি করে জমাতে হয়। ও হরি, এ মেয়েও যে  জলের মত টাকা খরচ করে। 
অগত্যা শেষ আশা ছিল বিয়ে। বিয়ে করে টাকা জমাব। কোথায় কি! আমার পতি দেবতা উচ্চ মার্গে বিচরণ করেন সর্বদা। আজ অব্দি এক পয়সা জমাননি। বললেই বলেন কি করবি জমিয়ে সর্বং খণিকং,খণিকং।।
বাকি রইল আমার শ্বশুর, শাশুড়ি।  শ্বশুরমশাই রোজ পাঁচ রকম মাছ আর অকারণ জিলিপি কচুরি  করে পেনশনের টাকা ফুরিয়ে ফেলেন জানি। বাকিটুকু অজানা। কিন্তু যার গল্প দিয়ে খরচের গল্প শেষ করব তিনি আমার শাশুড়ি।  
তার দুখানা  গয়নার দোকানের ছোট লাল ভেলভেটের ব্যাগ আছে। একখানা সবার সামনে বের করেন। আর একখানা গোপনে রাখেন। কেবল আমি জানি। তা উনি রোজ বাংলা ইংরিজি মিলিয়ে চারখানা খবরের কাগজ পড়েন কিন্তু ভাবেন এখনও দার্জিলিঙে গেলে পনেরো টাকায় উলের ব্লাউজ পাবেন।  চারশো টাকায় টিস্যু বেনারসি কিনব এই আশায় গোপন আর ওপেন ব্যাগ নিয়ে রেয়ারলি গড়িয়াহাট যান আর সাতহাজার টাকার বাজার করে ফেরেন।কেবল  নিজের জন্য নয় খুড়তুতো বোন থেকে বৌমার মাসি যে কেউ থাকতে পারেন সেদিনের বাজারের লিস্টিতে। ফিরে বরের  কাছে অবধারিত বকা খাবেন, এ ভাবে পেনশনের টাকা নষ্ট করার জন্য।আমি মনে মনে ভাবি কে কাকে বলে! শাশুড়ি অভিমান করেন। জীবনে যতগুলো না করা চাকরি, এবং যেগুলোর করার সম্ভবনা  ছিল সেগুলো এই সংসারের জন্য কেমন করে ছেড়েছেন তার কথা বলেন।সেখান থেকে  উনি ফিরে যান সত্তরের গোড়ার দিকে ওনার কলেজ জীবনে, বসন্ত মালতি, ওলি সেন্ট আর ১৪ টাকার র সিল্কের ব্লাউজে। আর বলেন ঠিকই আছে যা ভেবেছি তার চেয়ে অল্প একটু বেশি খরচ হয়েছে বলো। আমি মনে মনে ভাবি উনি যা ভাবেন সেটা কি বলেন না, নাকি যা খরচ করেন সেটা মনে রাখেন না। 
আমি কি আর করি বলি মা তোমার তো অনেক খরচ হয়ে গেলো আমি বরং তোমায় কিছু দি? আমায় চোখ টিপে বলেন নানা চিন্তা করো না, ওসব তোমার বাবাকে বলি।আমার ওই ব্যাগে গোপন অনেক টাকা আছে। ওই টাকা আমি ভুলেও খরচ করি না। তোমার বাবার থেকে কেঁদে কেটে নিই। আমি সরল বিশ্বাস থেকে ভাবি যাক একজন তো জমাতে পেরেছে আমার জীবনে। 
তা এই মাসখানেক আগে আমায় শাশুড়ি বললেন আমায় একটা ভালো ব্যাগ দাও তো, আমার জমানো টাকার ব্যাগের চেন কেটে গেছে। এই টাকা জমানো  ছাড়া সমস্ত ব্যাপারে আমার শাশুড়ি আমার চেয়েও বেশি অগোছালো । তাই বললাম দাও তোমার টাকাগুলো নতুন ব্যাগে গুছিয়ে রেখেদি। দেখলাম ওঁর গয়নার দোকানের লাল ব্যাগটা একেবারে পেট মোটা হয়ে ফুলে উঠেছে। ভেতর থেকে টাকা বের করতে গিয়ে আমার চক্ষু চড়কগাছ। একবছর আগে ডেট পেরিয়ে গেছে এমন লন্ড্রির বিল থেকে ২০১৪ সালের ট্রেনের টিকিট অব্দি সব আছে। ভাবুন এটুকু ব্যাগে আর টাকার জন্য কতটুকুই জায়গা থাকে।  ক্রমশ আশার আলো নিভছিল। তবু ভাবলুম জমানো টাকা কখানা দেখি।  হায়রে  দু এক খানা দুহাজারের নোটের পরেই এক গোছা পাঁচশ টাকার নোট। সবই নোট বাতিলের  জমানার টাকা। আমি বললাম একি করেছ। তুমি এগুলো এখনও রেখে দিয়েছ। পাল্টাওনি কেন। বললেন পাগল তোমার বাবা জানতে পারবে  আমার জমানো টাকার কথা, তখন? আমি বললাম তুমি রোজ এতগুলো খবরের কাগজ পড়, জাননা এই সব নোট বাতিল হয়ে গেছে। বললেন NRI রা পাল্টাতে পারে। তোমার দিদি এলে ওর হাতে দেব। আমি বুঝলুম ওঁর জমানো পুরোটাই খরচের খাতায়। কোন কচুবনে তপস্যা করেছিলুম কে জানে। আমার চেয়ে উপযুক্ত শ্বশুরবাড়ি আজ অব্দি ভূভারতে কোনও মেয়ের হয়েছে কি?

থাকুক বর্ষার রাত্রিরা


বন্ধ ঘরে শুয়ে থাকলেও আমি টের পাই আজ মেঘ করেছে। আমার মাথার যন্ত্রনা হয়। তাই অনেক বর্ষার সকালেই উঠি আমি খিঁচখিঁচে মেজাজ নিয়ে। অথবা ওঠার আগেই মনে হয় স্নান করার গামছা থেকে অন্তর্বাস সব আধশুকনো হয়ে থাকবে, কেমন গুমসুনি গন্ধ, বমি আসে আমার।রান্নার দিদি আজ বর্ষার জলে ডুব দেবেই,  তাই বর্ষার শর্টকাট ফরমুলা খিচুড়ি হবেই হবে। খিচুড়ি দেখলেই আমার দিল্লির হাসপাতালের স্মৃতি মনে পড়ে। বাবা গো সেই ওষুধের গন্ধমাখা খিচুড়ি।   
আমার তিনশ বছরের পুরনো শ্বশুরবাড়িখানা প্রত্যেক বর্ষারদিনে মনে হয় ছেড়ে চলে যাই। এতো বড়বড় ফ্লাট চারপাশে। ওগুলোর ভেতর এই ঘোর বর্ষাতেও শুকনো খটখটে।  অথচ এই বাড়িটাতে বৃষ্টি পড়লে  ঝুল বারান্দার হাঁড়ি বসাতে হয়। কড়িবরগার ফাঁক বেয়ে সেই হাঁড়িতে টুপটুপ করে জল পড়ে। এরা বলে এসব বাড়ির ঐতিহ্য, এসব ছেড়ে যাওয়া যায় না। আর আমার ভয় করে পা পিছলে পড়ে আমার এল ফাইভ আর এল সিক্সে ফাঁক হয়ে গেলে কাজ কর্ম সব বন্ধ। চার্নকের আমলের মেঝে খুঁড়ে বাথরুমে মার্বেল বসালেও কেঁচোগুলোও এই বাড়ির সদস্যদের মতই অনড়, এই পুরনো বাড়িখানা ছেড়ে যেতে চায় না কিছুতেই। বাথরুমের দেওয়াল ধরে হেঁটে চলে বেড়ায় আর দেওয়ালে আঠালো দাগ রেখে ওরা ডেস্টিনেশন খোঁজে। আমার স্নান করতে গিয়ে গা ঘিনঘিন করে। তাই বর্ষা পড়লেই আমি চোখখুলেই একের পর খুন করতে থাকি, আসিড ঢেলে ঢেলে। আর  লেডি ম্যাকবেথের মত কেঁচোর আঠালো দাগ দেখতে পাই হাতে। এইসব কেঁচো টেঁচো মেরে, দুর্গন্ধযুক্ত অন্তর্বাস পড়ে,  খিচুড়ি গিলে, হাঁটু ডোবা জল ঠেলে ডায়মন্ড হারবার রোডে গিয়ে অটো ধরি আমি।  কফ, থুতু, পেচ্ছাপ মেশা জল মাখা শরীর নিয়ে সারাদিন ডিও মেখে ঘোরা আমার পোষায় না আমার। মনে হয় আপিসে গিয়ে লাভ ক্ষতির হিসেব মেলান যায় না। সবটাই ক্ষতি মনে হয়। আমি তো আসলে সংসার নয়, অফিস নয় অন্যকিছু করতে চেয়েছি আজীবন। কি যে সেটা বর্ষার সকালে মনে পড়ে না কিছুতেই।সারাশীত সারা গ্রীষ্ম আমি কোনও ফুটপাতবাসীর কথা ভাবি না। প্রবল দাবদাহে অথবা ভয়ঙ্কর ঠান্ডায় লোক মারা গেলে কেবল খবরের কাগজে পড়ি। কিন্তু বর্ষা হলেই গরীব মানুষের জন্য দরদ উথলে ওঠে আমার। আমি তখন সাম্যবাদী হয়ে যাই। নিজেকে আইডেন্টিফাই করতে পারি ওদের সঙ্গে। সারাদিন বর্ষার কোনও রোমান্স আমার মনে জাগে না।
অথচ দিনের শেষে যখন বাড়ি ফিরি তখন বেহালার জমা জলগুলোকে  ভেনিস মনে হয়। শাশুড়ির হাতের গরম ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি আর শ্বশুরমশায়ের আনা ইলিশের কথা মনে পড়ে। বাড়ি ফিরে আধভেজা গামছায় মুখ মুছতে মন্দ লাগে না। এসে পরনে জামা কাপড় ধুয়ে দিতে দিতে মনেই হয় না কাল এরা আধশুকনো থাকবে। বাথরুমের দেওয়ালে কেঁচোরা হেঁটে বেড়ালে দেওয়ালে কতরকম ডিজাইন তৈরি হয় আমি দেখি। আমার মুখোমুখি হয় কত কেঁচো, আমাদের হাসি বিনিময় হয়। ওরা ভাবতেই পারে না কাল সকালে আমার হাতে খুন হবে ওরা। আমিও ভাবি না তখন কোনও হত্যার কথা। রাত্রিবেলায় যখন অঝোর ধারে বৃষ্টি নামে তখন সারাদিনের লেগে থাকা আবর্জনা ধুয়ে যায় শরীর থেকে। কড়ি বরগা থেকে হাঁড়িতে টসে পড়া জলের শব্দে মনে হয় জলতরঙ্গ বাজছে।
বর্ষার রাতে আমি চোখ বুজলে স্পষ্ট দেখতে পাই  সেই সব মেঘেদের যারা নির্বাসিত যক্ষের বার্তা নিয়ে উড়ে চলছে অলকায়। সেই সব উড়ন্ত মেঘেদের ব্যাকগ্রাউন্ডে মেঘমল্লার বাজে । আমি কখনও শান্তিনিকেতনের বর্ষা দেখিনি অথচ বর্ষার রাতে চোখ বুজলে দেখতে পাই কদম ফুল থেকে চুঁইয়ে পড়া জল। শুনতে পাই কে যেন গাইছে ”বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান"
এই বর্ষার রাতগুলোতেই আমার মনে হয় আমি মংপুতে কোনও কাঠের বাড়িতে বসে পাহাড়ের বৃষ্টি দেখছি। আমার বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে মৈত্রেয়ী  দেবীর বাড়ি,  সেখান থেকে ভেসে আসে   "শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা নিশীথ যামিনী রে " বর্ষার রাতে আমি জঙ্গলের ট্রি হাউসে আছি বলে মনে হয়। সেখানে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আওয়াজ আর ঝিল্লির ডাক মিলে মিশে এক মায়াময় শব্দ তৈরি হয়।  মনে হয় আমি তো জীবনটা কেবল এমন শব্দ শুনেই কাটাতে চেয়েছি।  শুধু এ জন্যই বেঁচে থাকা এ জীবনে। মনে হয় "সমাজ সংসার মিছে সব, মিছে এ জীবনের কলরব" 
আচ্ছা কোনওদিনও বর্ষার সকাল না এলে কী হয়। থাকুক না বর্ষা জুড়ে কেবল রাত্তির। বর্ষার দিনগুলো বড্ড ডিপ্রেসিভ।

আশায় আশায়


নিজেকে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয় আমার। আফগানিস্তান থেকে আলমবাজার সর্বত্র নিজেকে দেখতে পাই ঘুমের মধ্যে। উপায় কী! পা চলে তো পকেট চলে না। পকেট আনা দু আনায় ভরে উঠলে শরীর চলে না অথবা সময় নেই বলে সময় বয়ে যায় বেশ খানিক। অগত্যা যাযাবরের জীবন কাটে এই ফেসবুকে, ইউটিউবে ইনস্টাগ্রামে অথবা গুগুলে।
এই সব সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়ালে আপনি সমাজ, সংসার অন্তর সব দেখতে পাবেন। এখানে ঘুরে বেড়ালে বুঝবেন সাম্যের ধারণা কত ভুল অথবা বস্তাপচা। এখন তো হাতে হাতে মোবাইল আর মোবাইলে মোবাইলে ফেসবুক। সবাই ফেসবুকে আছি মানে বালিগঞ্জ আর বনগাঁর বন্ধুত্ব হবে ভাববেন না।  সোনারপুর হয়ত সাউথ সিটির ফ্রেন্ডলিস্টে থাকে কিন্তু তাদের মধ্যে বিস্তর তফাত। এখানে হিন্দু মুসলমান, বাম, বিজেপি, তৃণমূল, ছেলে,মেয়ে,হিজড়ে, কালো, ফর্সা, লম্বা, বেঁটে, শিক্ষিত, অশিক্ষিত,  এম.এ, বি.এ, ডাক্তার, এঞ্জিনিওর ব্রাহ্মণ, শূদ্র এমন হাজার হাজার ভাগ আছে।  ক্লাস ডিফেরেন্স অতি স্পষ্ট।  উদাহরণ স্বরূপ বলি খুব নাম করা এক মহিলা লেখককে দেখি রোজ ফেসবুকে লেখেন, গান গান, গাছ পালার ছবি দেন, রান্নার ছবি দেন, নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করেন। অসম্ভব সুন্দরী সেই লেখককে আমি রোজ দেখি। আর মনে মনে তাঁর মত বাঁচতে চাই। তা সেই লেখকের অগণিত ভক্ত, তারা তাঁর ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টেই আছেন। মহিলা আক্টিভ হলেই তারা মন্তব্যের ঝড় তোলেন। এতো যে সবাইকে উত্তর দিতে হলে তিনি পাগল হয়ে যাবেন। তাই মহিলা বেছে বেছে উত্তর দেন, লাইক দেন, লাভ দেন। কাদের বেছে নেন যাঁরা তাঁর ক্লাসের। একই রকম সোশ্যাল স্টেটাস। ধৈর্য অগাধ,  নাহলে দেড়শ মন্তব্যের ভিড়ে ক্রিম অফ সোসাইটি বাছা মুখের কথা নয়। আমার আগে ভারি রাগ হত। মনে হত বেশ তোমার সবাইকে উত্তর দেওয়ার দরকার নেই,  সব মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য হয়ও না, কিন্ত একটা চিহ্ন তো আঁকা যায়, কান্না,হাসি,ভালোবাসা, রাগ কতই তো চিহ্ন দেওয়া এখানে। তাই যদি না পারো কাউকে দিও না। আরে বাবা তোমার লেখক বন্ধুর অথবা বড়লোক সুগৃহিনীর রয়্যালটিতে কি জীবন চলবে, চলবে তো এদের জন্য। পরে মনে হয়েছে বেশ করে। অন্তত তাঁর অন্তরটি তো দ্যাখা যায়। মনে মনে ক্লাসলেস বলে গাল দিয়ে আয় গলা জড়াই বলে সোশ্যাল ওয়ার্ক করার চেয়ে এই ভালো।  যে জিনিস ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে তার জন্য কাঙালপনা বাড়ে তিনি জানেন।
এই যে সাজানো  ডিশ, সাজানো  ঘর, সাজানো আমি,  এইটেই কেবল সারসত্য হয়ে ধরা দিক মানুষের কাছে এই তো সকলের কাম্য। সেই তাসের ঘরের বউটিকে মনে পড়ে আজকাল খুব। ভেতরের ফোঁপরা জীবনটুকু আড়াল করার নামই সোশ্যালমিডিয়া। এই সব মিডিয়ামগুলো আসলে ফরাসি পারফিউমের গন্ধ। আপনার বাতকর্মের গন্ধটুকু আড়াল করার জন্য এর চেয়ে ভালো আর কিচ্ছু পাবেন না। 
আমি নিজেও তো নির্লোভ,  নির্মোহ নই। আমার মধ্যেও ছলনা, কপটতা  ভণ্ডামি ঈশ্বর ঠেসে ঠেসে দিয়েছেন। তবু ভাবি মুক্ত হব কোনও দিন সব কিছু থেকে।  তাই কদিন মনকে প্রবোধ দিচ্ছি পুকুরঘাট আসলে বৃহৎ সত্যের সন্ধান আর আমার নিজের দ্যাখাটাই সংকীর্ণ। আশা হারান পাপ এটুকুই একমাত্র সত্য, এই আশা নিয়ে আমি রোজ পুকুরপাড়ে এসে বসি আর আপনাদের ডাকাডাকি করি।

যাতে প্রতিবাদ ভালো হয়

#যাতে_প্রতিবাদ_ভালো_হয়
যাঁরা ভাবছেন প্রতিবাদ করে পরিবর্তন আনবেন তাঁরা এই সমস্ত ডিপ্রেশনের দিনে ঘরে বসে না থেকে বেরিয়ে পড়ুন। অবশ্যই আপনার বাড়ির গাড়িতে নয়। পায়ে হেঁটে অথবা বাসে, ট্রেনে, মেট্রোতে। ধরুন আপনি হাজরা মোড়ে  ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন বাসের আশায় দেখবেন আপনার পাশের লোকটি প্যান্ট খানিক গুটিয়ে, বাঁ বগলে ফাইল নিয়ে, বাঁ হাতে একটা শিক বের করা ছাতা নিয়ে, ডান হাতে সদ্য নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ঠোঙায় বাজার নিয়ে, কাঁধ দিয়ে কানে ফোন চেপে উচ্চগ্রামে গিন্নির কাছে আবদার করছে খিচুড়ি খাবার, সে জন্য সে  মাস  শেষে চড়া দামে অসময়ের ফুলকপি কিনে নিয়ে যাচ্ছে এ কথাও আপনি শুনতে পাবেন। বিকট চিৎকার আর ঘরের কথা পাবলিকলি বলা আপনার যতই আনসিভিলাইসড মনে হোক এমন এসব ডিপ্রেশনের দিনে এক হাত অন্তর এসব ঘটেই থাকে। অথবা যে ব্রান্ডেড ভুজিয়াওয়ালার থেকে আপনার ড্রিংসের চাট আসে তার দোকানের নিচে দেখবেন সাতখানা প্লাস্টিকের চিরুনি, আর কয়েকটা প্লাস্টিকের আয়না নিয়ে মাটিতে বসে আছেন এক বৃদ্ধ। কোমর থেকে সপসপে ভিজে ওই বৃদ্ধের চুলে কিন্তু চিরুনি পড়েনি আজ। আর বৃদ্ধের না বিক্রি হওয়া প্লাস্টিকের আয়নায় জলের ছিটে আর চলমান জীবনের ছবি দেখতে পাবেন একটু উঁকি মারলেই। দেখবেন রোজকার চা ওয়ালা বৌদি ভিজে সপসপে মানুষগুলোকে চা দেবে বলে ডেচকি থেকে মগের ওপরে রাখা  ন্যাকড়াতে চা ঢালছে আঁচল দিয়ে ধরে। সরে যাওয়া আঁচলের ফাঁক দিয়ে তাঁর একখানা হুক খুলে যাওয়া বুকের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে কেউ কেউ তাকিয়ে আছে জেনেও, যতক্ষণ না চা ঢালা হয় আঁচল টানার উপায় নেই তাঁর। দেখবেন রাধা গোবিন্দর মন্দিরের সামনে ফুলওয়ালারা ফুলে প্লাস্টিক চাপা দিয়ে, হাতে এক গোছা গোলাপ নিয়ে বিষন্ন মুখে বসে আছে। যদি কোনও প্রেমিক এই ভরা বৃষ্টির দিনে একথোকা গোলাপ নিয়ে যায় সেই আশায়। আর রজনীগন্ধার স্টিকগুলো দেওয়াল ধরে  মাথা উঁচু করে দাঁডিয়ে আছে। কত দূরেই বা ক্যাওড়াতলা শ্মশান,  চিত্তরঞ্জন হাসপাতাল থেকে যারা লাস হয়ে বেরোয় তাদের ডিপ্রেশনেও রজনীগন্ধা লাগে। আর দেখবেন ফুলওয়ালার ডাঁটি ভাঙা চশমার কাচ জলের ছিটে লেগে  কেমন ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। এইবারে বাসে ওঠার পালা। যথারীতি আজ আপনি জায়গা পাবেন না। উঠে আপনাকে বলতেই হবে দাদা একটু পেছন দিকে এগোন না। পেছনটা খালি আছে। আমরা ঝুলছি। তারপর কোনও রকমে ডজ মেরে গিয়ে একটা রড ধরে সেট হয়ে যান। মাঝে মাঝে বলতে থাকুন দাদা ছাতা সামলে, প্লাস্টিকের প্যাকেট আনতে পারেন না বাড়ি থেকে আপনার ছাতার জলে ভিজে গেলুম ইত্যাদি। এসবের মাঝেই যারা সিটে বসে আছেন তাঁদের প্রচন্ড ঈর্ষা করতে করতে ওঁদের গল্পেই মশগুল হয়ে যান। দেখবেন NRC থেকে বিক্রম, ডি. এ বাড়া না বাড়া থেকে হিন্দি আগ্রাসন, মমতা, মোদী আর সিপিএম কে বেশি খারাপ নিয়ে মতান্তর অথবা মতানৈক্য, বাঙালি জাতির ধ্বংসের  সম্ভবনা এসব নিয়ে  তুমুল আড্ডা চলছে। একজনের পায়ের ওপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোও তাতে মিশে যাচ্ছে দিব্য। কারও কারও কণ্ডাক্টর সঙ্গে একটাকা  বেশি ভাড়া নিয়ে তুমুল তর্ক হচ্ছে। তাতে সমবেত ভাবে বহু স্বর শোনা যাচ্ছে রোজ রোজ এই এক টাকার চালাকি আর চলবে না বলে। তার মাঝেই কেউ বলছে তার মেয়েও ভালো গান গায় কিন্তু রানুদির মত কপাল নয়। দেখবেন এদের সমস্ত গল্পের মাঝখানে কেমন কান্না মিশে থাকে। এমন কি হাসিতেও। এসব সামলে ধীরে ধীরে আপনার বাড়ির স্টপেজে নেমে যান। তারপর আপনার তেইশ তলার ফ্লাটে লিভিং এরিয়ায় বসে চিন্তা করুন কাল ফেসবুকে অথবা কোনও এসি সভাকক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় যাদবপুরের পক্ষে থাকবেন না বাবুল সুপ্রিয়, নাকি কাউকেই না চটিয়ে ট্রাম্পে চলে যাবেন সোজা। সঙ্গে হালকা সিম্ফোনি, কাঁচের গেলাসে দামি হুইস্কি আর আর আপনার টেরেস গার্ডেনের ট্যোমাটো স্যালাদ মাস্ট। তাতে বিপ্লব ভালো হয়।
নীলা বন্দ্যোপাধ্যায় 
২৫.০৯.১৯

উৎসব প্রিয় বাঙালির পুজো ও প্রস্তুতি


--------------------------
 উৎসব প্রিয় বাঙালিরা দুর্গা পুজোর কেনাকাটা শুরু করেন চৈত্র সেল থেকে।  অপছন্দের আত্মীয়দের এবং হঠাৎ আসা পূজা গিফটের, রিটার্ন গিফট হিসেবে যা দেওয়া হবে তা এই সময় কিনে ফেলা হয়। এ ছাড়া পুজোয় ঘরে পাতার বিছানার চাদর, ঠাকুরের শাড়ি এবং পুরুতের গামছা ও নিজের  দুর্গা পুজোয় হতে পারে শাড়ির কথা ভেবে চার জোড়া সায়া উৎসব প্রিয় বাঙালি চৈত্র সেলেই কেনেন 🛍। 
আসল কেনা আরম্ভ হয় পুজোর দেড় মাস আগে থেকে শুরু করে পঞ্চমীর দিন পর্যন্ত। এসময় দোকানে গেলে হামেসাই শুনবেন  'না অত ভালো দিতে হবে না । এটা নিজের জন্য নয়, লোককে দেবো’🙄। 
এবার নিজেরটা পছন্দের পালা, এই কাজে সাত দিন থেকে সতেরো দিন লাগতে পারে। বাজেট নিজের চার থাকলে অন্যদের থেকে পাঁচশো করে কমিয়ে সাত থেকে দশে চলে যায়। আদর্শ পুরুষরা কিন্তু এসব বুঝেও না বোঝার ভান করেন🙄🙄। নচেৎ পঞ্চান্নতেও প্যান্ডেলে বসে বাইশের মেয়েকে বৌমা না ডেকে 'বৌদি ভালো তো' বলা, 'কত্তার আজও অফিস' বলে খুঁচিয়ে ঘা করে হোয়া নম্বর নেওয়া অসম্ভভ। বন্ধুদের সঙ্গে অষ্টমীর বিয়ার পার্টিও অসম্ভব🍷🍾। পারমিশনই পাবেন না। 
 জামা কাপড়ের বাজারে গেলে আপনি কিন্তু রকম ফের পুরুষ পাবেন উৎসব উপলক্ষে।  বাজার লাভার পুরুষ এবং বাজার হেটার পুরুষ। দুদলই যদি বিবাহিত হন গিন্নির সঙ্গ দান করেন, ভালোবেসে ও না বেসে। অনেক বিবাহিত পুরুষ আবার মাখো মাখো সম্পর্কের মহিলা কলিগের বা বান্ধবীর  সঙ্গ দান করতেও জামা কাপড়ের দোকানে ঘোরেন।  সাম্প্রতিক অতীততে সবাই দেখেছি তাই উদাহরণ আর দিলুম না 🤫। এক দল পুরুষ অবিশ্যি নিজের উৎসবের পরিধান নিজে কেনেন। তারা হয় অবিবাহিত নয় বিবাহ বিচ্ছিন্ন, নয় বৌ তাদের নারীবাদি বা কমুনিস্ট অথবা বিয়ের পর বউয়ের সঙ্গে কেমিস্ট্রি জমে ওঠেনি, একেবারেই বউয়ের  রুচি, বুদ্ধির ওপর আস্থা নেই। ❌
 আর এক দলের কেনাকাটা বান্ধবী বা বৌরাই করেন। এরা বেশি বুদ্ধিমান। বাজার প্রিয় রমনীরা রুমাল, জাঙ্গিয়াও একটা লাগলে দুটো কেনেন। কুর্তা আর টি শার্ট আর নাই বা বললুম। এদের কেউ জিজ্ঞেস করল ধরুন 'স্যান্যাল দা কোথা থেকে নিলেন জামাটা? এই সব পুরুষদের উত্তর হয় ’এটা? কে জানেরে তোর বৌদি কোথা থেকে কিনেছে’ যাচ্চলে কিনে যখন এলেন বৌদি, বিলটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে ভুলে গেলেন 🤔!
আবার কোনও কোনও বাজার প্রিয় পুরুষ বৌকে নিজে পছন্দ করে কাপড়, সায়া, ব্লাউজ এনে দেয়। সেই সব বৌরা বলেন ’আমি বাবা কিনতে কাটতে পারিনা তোমার দাদা এসব ব্যাপারে খুব এক্সপার্ট’, 👰। 
এই সব মেয়েদের ভাববেন না নিপীড়িত।  এদের ক্ষেত্রে দাদারা আপিস গেলে বাড়িতে বেচতে আসা শাড়িওলার কাছে মাসে মাসে খাতা চলে।
 উৎসব প্রিয় মেয়েরা যখন পার্লারে যায় ফর দুর্গা পুজো অনলি, তখন অবিশ্যি  মহালয়ার হয়ে যায়, চলে পঞ্চমী অব্দি। চুল অবিশ্যি  একটু আগে কাটে💇।  এ সময় ভুরু ছাঁটে আর মুখ পালিশ করে। ওখানেও টিকিট হাতে ডাকের অপেক্ষা করতে হয়, এবং এ সময় ছেঁটে ডান ভুরুর সঙ্গে বাঁ ভুরু ম্যাচ করে না। গড়িয়া হাট থেকে জাঙ্ক জুয়েলারিও এসময়ই আসে। এবং এই সব মহিলারা জুতো কেনার জন্য ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন যতদিনে না খাদিম বা শ্রী লেদার্সে ঢুকে ভিড়ের চাপে দম বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে অনলাইনে জুতো কেনা হয়ে যায়, এবং মাপে ফিট হয় না,এই নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের লেডিস গ্রুপে কান্নার ইমোজি সহ খবর পৌঁছে দেন তাঁরা 😭এবং জুতোর দাম মিনিমাম তিনশো টাকা বাড়িয়ে বলেন।এ ক্ষেত্রে কেসটা বয়েসের উলটো।👠👡  জুতোর  ব্যাপারে পুরুষরা বেশ সৌখিন। মহিলাদের চেয়ে দামী জুতো পরা তাদের জন্মগত অধিকার। জুতো কোম্পানিরাও এ ব্যাপারে চরম patriarchy তে ভোগেন। জুতোর দামও রাখেন সেই হিসেবে 👢।
এরপর পুজোর দিনগুলোতে সেই জুতো পরে শালী সহযোগে কেউ কেউ ঠাকুর দ্যাখেন। গিন্নিরা অবশ্য দেওর, ননদের নিতে পছন্দ করেন না। হামলে রোল খান কত্তা গিন্নি বা প্রেমিক প্রেমিকা দুজনেই। (তার আগের দুমাস প্রবল ডেয়েটিং সেদিন ভঙ্গ হয়) মেয়েরা কেবল কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল হাতে নেন। বাচ্ছা থেকে গিন্নির হিল ভাঙা জুতো বাকি সব দ্বায়িত্বই পুরুষের এই ঠাকুর দ্যাখার দিনগুলিতে। গিন্নিরা লাইনে খুব এক রোখা, কাউকে এক চুল জায়গা ছাড়েন না। কত্তারা কিঞ্চিৎ দয়ালু, ডিপ কাট ব্লাউজের বৌদিকে আগে ছেড়ে দেন। আবার যদি সে বৌদি ইংরেজিতে সাহায্য চান তো কথাই নেই। 
এরপর আছে রেস্তোরায় লাইন দেওয়া। কাঙালি  ভোজন এবং বস্ত্রদানের লাইন এর চেয়ে ডিসিপ্লিনড হয়। খাবারের দোকানের চেহারা নাই বা বললুম। 
জেনারেশন নেক্সটের আরেক সঙ্কট👧👦, বিশেষত ষোল থেকে সাড়ে সাতাশ।  তারা অন লাইনে জামা কেনে, অধিকাংশই ফিট করে না, তাও পরে। তারা ভুলে যায় দুর্গা পুজো ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পনশর করে না। কাজেই মার্কিনি হাফ প্যাণ্ট, গোড়ালি অব্দি মোজা আর নর্থ স্টার পরে ঠাকুরের লাইনে দাঁড়ালেও মশারাও পিছু ছাড়ে না, আর ভাদ্দরের গরমও কমে না। এদের উন্মুক্ত পদযুগলে থাবড়ে থাবড়ে মশা মারতে হয়, এবং ফাস্ট ফুডের মোটা শরীরে টাইট সিন্থেটিক টি শার্টে গ্যাল গ্যাল করে ঘাম হয়। ব্যাপারটা দৃশ্যগত ভাবে ভালো না। বিশ্বাস করুন পোশাক হিসেবে আমার বিকিনিতে বা ছেলেদের উন্মুক্ত বক্ষেও আপত্তি নেই। কিন্তু ওডোমশ মেখে পোশাক পরা যায় না। 
যাই হোক জেনারেশন নেক্সটকে তার ওপর বাপ, মা বাংলা কালচার থেকে দূরে রাখবেন বলে  বলে অসুর আর গণেশের তফাৎও শেখাননি, কাজেই বেচারারা এতো লাইন দিয়ে কি যে দ্যাখে কে জানে। অনেক সময় কিছু না বুঝে দুগগা ফ্যামিলিকে ক্রিস্টোফার নোলানের সিনেমার ক্যারেক্টর হিসেবে ভেবে নেয়।  দাদা, বৌদি, মাসিমা, মেসোমশাই এসব করে সপ্তমীর সকালে তারকেশ্বরের জল যাত্রীর মতো পা ফুলিয়ে বাড়ি ফেরেন। কাল নর্থ কভার করবেন অথবা স্রেফ প্যান্ডেলে থাকবেন এই প্লানিং নিয়ে। আজ এই অব্দি। শুভ সপ্তমী। 
ডিসক্লেমার ১- কাল লিখে নিমকি চেয়েছিলুম আজ নারকেল নাড়ু চাইলুম। চিনির নাড়ু অবশ্যই, এট্টু কপ্পুর দেবেন। বিজয়ার দিন আমাকে কৌট করে দিয়েও দিতে পারেন। অধমের পিতৃদত্ত নাম নীলা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাগ করে আমার নাম মুছে দেবেন না।🙏
ডিসক্লেমার ২- কাউকে আঘাত দিলে ক্ষমা করবেন। এসব পুজোর রসিকতা। আদপে আমি সিরিয়াস মানুষ প্রোফাইল ঘাঁটলেই বুঝবেন। সত্যি বলছি বাঙালির উৎসব বেঁচে থাক। কেবলই তো না পাওয়া। এইটুকু না থাকলে কি নিয়ে থাকে বলুন তো বাঙালি। আমার মত সিনিক বাঙালিকে পাত্তা দেবেন না।  আমরা ঘাটেও নহি পাড়েও নহি। ষোল আনা ফুর্তির ইচ্ছে, অথচ ইন্টেলেকচুয়াল জোনে নাম লেখাবার প্রবল প্রচেষ্টায়, পেটে ক্ষিদে মুখে লাজ। বেঁচে থাকুক দুগগা পুজো।❤❤ বেঁচে থাক বাঙালির উৎসব প্রিয়তা।

আর কবে দশভুজা হবো

#আর_কবে_দশভুজা_হবো
কোনও কোনও বাচ্ছার মাকে যদি  জিজ্ঞেস করেন বাচ্ছা খুব শান্ত, না? মা উত্তর দেন 'ওই আরকি'।অনেকের আজীবন ওই আরকি হয়েই কেটে যায়। এই যেমন  আমার। চারপাশে সদর্থেই  দশভুজাদের যখন দেখি মনে মনে ভাবি আমি ধোপার গাধা। বরাবর লেখাপড়ায় ওই আরকি। কিছুতেই খারাপ বলতে পারত না কেউ কিন্তু কস্মিনকালেও এক্সিলেন্ট হওয়া হলো না। খেলাধুলো আর নাই বললাম অথচ খেলা দেখতাম বিশেষজ্ঞের মতো। নাচ,গান, ছবি আঁকা ওই আরকি। হাতের লেখা ওই আরকি। লেখার হাত ওই আরকি। গায়ের রঙ ধলা কিন্তু কি নেই কি নেই, উচ্চতা মাত্র পাঁচ, চুল এক কালে ছিল, নাক টিকলো কিন্তু অতিরিক্ত, কান প্রয়োজনের তুলনায় ছোট(নির্বোধ আর বুদ্ধিমান কানের সাইজ দিয়ে মাপা যায়), চোখ বড় কিন্তু টু থেকে চশমা পরে গভীর গর্তে, পৃথিবীর সমস্ত ইন্টিরিওর ডিজাইনিংয়ের সাইট দেখি, কিন্তু স্তুপাকৃত জামা কাপড় আর বইয়ের তাকের জমতে থাকা ধুলোর গতি করতে পারিনা মিতালি দি, মিনতিদের ছাড়া। আজীবন খেতে ভালোবাসি অথচ এ পর্যন্ত, মা, জেঠিমা, শাশুড়ি আর রান্নার মাসির ওপর জীবন কেটে গেলো। স্বামীর জাঙ্গিয়ার সংখ্যা থেকে রোজগারের পরিমান কিছুই মনে রাখতে পারিনা। বেশিদিন চাকরি করতে ভালো লাগেনা, অথচ বেশিদিন বাড়ি বসে থাকলে মনে হয় নিপীড়িত, অসহায় বঞ্চিত। কারো অসুখ করলে সেবা করতে পারিনা অথচ মাথা,ধরলেও বাম লাগানোর লোক চাই। ঠাকুর দেবতায় অবিশ্বাস নেই অথচ জীবনে একখানা ধূপ কাঠিও  ঘোরানো হয়নি। না হলাম বামপন্থী না হলাম দক্ষিণ পন্থী।  আল্ট্রা লেফট তো ভয়েই হব না। ছেলে পিলের বালাই নেই অতয়েব মাতৃরূপেণও নই। উজিয়ে রাত জেগে ঠাকুর দেখতে পারলাম না অথচ মনে মনে হুল্লোড় বেশ ভাল্লাগে। জম্মে নেশা করলাম না অথচ ভালো ওয়াইন দেখলে জিভ লকলক করে। অচেনারা বলে হেব্বি ব্যক্তিত্ব কাছের লোকেরা বলে ক্যাবলা, লুজ টকের পাহাড়। ভরা পঞ্চমীর দিন বসে ভাবছি  আমার ওই আরকি হয়ে জীবন কেটে গেলো মাইরি। আর কবে,দশভুজা হবো?

বাঙালি ভাবুন

আজ বাঙালির জয়। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌরভ গাঙ্গুলির সাফল্য বাঙালিকে গর্বিত করেছে। জানি একদল তীব্র আপত্তি করবেন কেন সৌরভের নাম নোবেল লরিয়েটের সঙ্গে নেওয়া হলো। সেসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য এই পোস্ট নয়। তাই দেবোও না। আমি এঁদের জন্য গর্বিত আমার বিশ্বাস থেকে।
কিন্তু বাঙালির এই সাফল্যের সংবাদ কানে আসার কয়েক ঘণ্টা আগেই এক বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা ও বাঙলা পুস্তক বিপণীর কর্ণধারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল বইয়ের বিক্রি নিয়ে। তিনি বললেন ’বাঙালা বইয়ের বিক্রি যে খুব আশঙ্কাজনক ভাবে কমেছে তা নয়, কিন্তু ছোটদের বাঙলা বইয়ের বিক্রি ক্রমশ কমছে, এবং দ্রুত কমছে' আমি প্রশ্ন করি, ইন্টারনেটের ব্যবহার কী তার কারণ? উত্তরে তিনি বলেন 'হিন্দি বইয়ের কথা আমি জানি না  ছোটদের ইংরেজি বইয়ের চাহিদা কিন্তু যথেষ্ট ভালো’

বিষয়টি বাঙালির জন্যে এবং বাংলাভাষীর জন্য যথেষ্ট আশঙ্কার। ছোটদের বাংলা বইয়ের বিক্রি কমছে মানে ক্রমশ একটা প্রজন্ম বাংলা ভাষা বিমুখ হচ্ছেন। কাজেই আর দশ পনেরো বছরের মধ্যে এই ছোটরা যখন বড় হবেন তখন বড়দের বাংলা বইয়ের বিক্রিও কমবে। এতে বাংলা প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কেবল বিপদ নয় এর থেকে এই ইঙ্গিত স্পষ্ট যে বাঙালি ক্রমশ বাংলাভাষা বিমুখ হচ্ছে। একজন আমেরিকান ইন্ডিয়ানের(বাঙালি) নোবেল আর একজন বেহালার বাঙালির বিসিসিআই-এর সভাপতিত্বে বাঙালির সন্তুষ্ট থাকা যথেষ্ট নয়, কেবল বাঙালির জয় নয় বাংলা ভাষার জয় অচিরেই প্রয়োজন। ভাষা না থাকলে জাতিটিই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে ক্রমশ। ভাববেন না আমি ছিদ্রান্বেষী।  আমি বাঙালির সাফল্যে প্রচন্ড খুশি। কেবল সেই সঙ্গে বিশ্বাস বাংলা ভাষার সাফল্যও প্রয়োজন।